বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে পদ্ধতির বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনে রূপ দেওয়া হয় তাকে প্রযুক্তিবিদ্যা বলে । বিজ্ঞান যখন মানুষের প্রয়োজনের সীমায় বাধা পড়ে তখন প্রযুক্তির জন্ম হয় । মানুষ নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছে । প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের কাছে সব কিছু সহজ হয়ে আসছে । চাকা আবিষ্কার, বিদ্যুৎ আবিষ্কার, টেলিফোন, টেলিভিশন, জেনারেটর, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ইত্যাদি প্রযুক্তি মানব জীবনকে করে তুলেছে আরামদায়ক ও আধুনিক । প্রযুক্তির কল্যাণেই মানুষ আজ নতুঙ্কে নতুনকে স্বাগত জানাতে অভ্যস্ত হয়েছে ।
দেশের স্বাথ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ মানুষকে সীমাহীন সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ এনে দিয়েছে । প্রযুক্তি মানুষের উপকারি বন্ধুর মতো । প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না । কারন যেখানে মানুষ আছে ,সেখানেই পৌঁছে গেছে বিজ্ঞানের কল্যাণের আলো । মানুষের মৌল- মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগানে প্রযুক্তি নানা ভাবে সহায়তা দান করেছে ।
তার মধ্যে কয়েকটি দিক হচ্ছে – কৃষি উৎপাদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ, দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়নের অন্তরায়কে তুলে ধরা, শিশু ও মায়ের মৃত্যুরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন সংক্রান্ত তথ্যাদি পরিবেশন করা, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে, অর্থনৈতিক লেন্দেন সূচক নিয়ন্ত্রন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা, বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নতি সাধনে সহায়তা করে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম তথ্য সরবরাহ ও পরিবেশন করা, মানুষকে কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রানিত করা, শিক্ষা বিস্তার, মানবীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি এবং সহিষ্ণুতা বিষয়ে মানুষের মধ্যে আত্নসচেতনা বোধ সৃষ্টি করা, অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করে ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর ৭টি রহস্যময় স্থান
প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে মানব জীবনের ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করেছে । মানব জীবনের বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞান অবদান রেখে চলেছে । প্রযুক্তি কল্যাণে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে । জমি চাষ, ফসল মাড়াই প্রভ্তি কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে । মানুষ এখন মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে সেচকাজ সমাধান করছে । প্রযুক্তির কল্যাণে অধিক ফসল উৎপাদান করে মানুষের প্রধান চাহিদা খাদ্য-চাহিদা মেটানো হচ্ছে । জল, স্তল, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে । মানুষ রেডিও,টেলিভিশন, ফ্যাক্স, ই-মেইলের সাহায্য নিয়ে সারা বিশ্বের খবর যেকোনো মুহূর্তে পেয়ে যেতে পারে । প্রযুক্তি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে পুরো পৃথিবীকে ।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে । ফাইবার অপটিকস ব্যবহারের ফলে মানব দেহের অভ্যন্তরস্থ ফুসফুস, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, অস্তিগ্রন্তি, শিরা, ধমনি ইত্যাদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্য অবলোকন করে নির্ভুল ভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় । শিক্ষার নানা উপকরণ এবং রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে । প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অল্প সময়ে অধিক কাজ অনায়াসে সম্পন্ন করছে । প্রযুক্তির ব্যবহার ও অগ্রগতির সাথে সাথে মানব জীবন হয়ে উঠেছে আরও উন্নত আরও আধুনিক ।
প্রযুক্তির কল্যাণে মানব সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে সত্যি, কিন্তু এটি শুধু মানুষের উপকারই সাধন করে নি , বরং অনেক অপকারও করেছে । ভুল তথ্য সরবরাহ তথ্যপ্রযুক্তির একটি নেতিবাচক প্রভাব । বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসংবলিত বিভিন্ন শিল্প-কারখানা নানা ভাবে নষ্ট করে চলেছে । সহজেই তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে । ঘরে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধচক্র বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিগ্রহ লাগিয়ে দিয়ে বিশ্বের শান্তি নষ্ট করে চলেছে । প্রযুক্তির এই ধরনের অপব্যবহারের জন্য আমরা বিজ্ঞানকে দায়ী করতে পারি না । এর জন্য প্রযুক্তির অপপ্রয়োগকারী মানুষরাই দায়ী ।
সাইবার আক্রমন, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এবং নতুন মোবাইল অ্যাপলিকেশনের হাত ধরে অনলাইন আজ বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম । বিশ্বের অধিকাংশ নাগরিকের কাছেই পৌঁছে যাবে ইন্টারনেটের সুফল । ব্যবসায়, বিপণ্ন এবং ভার্চুয়াল যোগাযোগ এ তিন পথই এখন তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দখলে । গবেষকেরা জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমেই বিশ্বের অনুন্নত জাতি গোষ্টির মানুষ আত্ননির্ভরতা অর্জন করবে ।