প্রতিদিন রাস্তাঘাটে চলতে দেখা যায় হাজারো হাজারো গাড়ি এবং তাদের চলাচল কন্ট্রোল রাখতে রয়েছে নানা রকম আয়োজন । যেমন- ট্রাফিক সিগ্যালান, রোড ক্রসিং সহ নানা কিছু । নদীপথে বা স্থলপথে চলাচলের জন্য এসব নির্দেশনা পাওয়া যায় । কিন্তু খোলা আকাশে কিভাবে কোনো নির্দেশনা ছাড়াই চলে প্লেন ? আর সারা আকাশ ফেলে কেনই বা নির্দিষ্ট রাস্তায় চলে প্লেনগুলো ও বিমানের সাথে অন্য বিমানের সংঘর্ষ কেন হয় না । তার আসল কারন হলো খোলা আকাশেও তারা একটি নির্দিষ্ট রোট মেনে চলে ।
যার নাম SKY HIGHWAY । আর এই HIGHWAY কিভাবে নির্দেশ করা হয় এবং সেটা কিভাবে মেইন্টেইন করা হয় । সাধারনত রাস্তার ম্যাপের মতো আকাশের রাস্তাগুলোরও ম্যাপ আছে । এবং সেই ম্যাপের রাস্তা অনুযায়ী পাইলটরা তা ফলো করে থাকে । ফ্লাইট টেকঅফ এর ৪-৫ ঘন্টা আগে পাইলট তার রোটপ্লেন সেট করে । যেখানে যাত্রা শুরু পয়েন্ট থেকে আরম্ভ করে যাত্রা শেষ পয়েন্ট এবং কোন রাস্তা দিয়ে সে যাত্রী নিয়ে যেতে চায় , প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে উল্লেখ থাকে । রোটপ্লেন তৈরি করার পর সেটা এয়ার কন্ট্রোলার টাওয়ারে প্রেরণ করা হয় । এবং এয়ার কন্ট্রোলার টাওয়ার সেই রাস্তায় কোনো প্রতিকূলতা আছে কী না সেটা যাচাই-বাচাই করে একটি রিপোর্ট হোস্ট কন্ট্রোলারকে পাঠায় । সেই রিপোর্টের ভিত্তি করে হোস্ট কন্ট্রোলার একটি নির্দিষ্ট রোটপ্লেন তৈরি করে থাকে ।
আর এই পুরো সিস্টেমকে FLIGHT DISPATCHER বলা হয় । রোটপ্লেন অনুমতি পাওয়ার পর পাইলট ফ্লাইট টেকঅফ করতে পারে । পাইলট প্লেনটি চালানোর সময় কিছু ওয়েভ পয়েন্ট ফলো করে । ওয়েভ পয়েন্টগুলো কিছুটা ইষ্টাপেজের মতো । তবে ফ্লাইটের ক্ষেত্রে পার্থক্য এই যে এখানে কোনো যাত্রী বাস বা ট্রেনের মতো উঠানামা করে না । এই ওয়েভ পয়েন্টগুলো পাইলটকে তার গন্তব্যে যাওয়ার দিক নির্দেশনা করে দেয় । এক ওয়েভ পয়েন্ট থেকে অন্য ওয়েভ পয়েন্টে যাওয়ার মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছানোর একটি নির্দিষ্ট ম্যাপ তৈরি করা হয় । যেটা এক গ্রাউন্ড বেস্ট রেডিও নেভিকেশন সিস্টেমকে ফলো করে তাকে VOR বলে । এটা HIGH এবং LOW রোটের ডিরেকশন দেয় ।
কোনো সমস্যার কারনে যদি পাইলট ওয়েভ পয়েন্টে নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চায় তাহলে কন্ট্রোলার রুমে থাকা এটিসিদের সাথে কথা বলে বদলাতে হবে । তবে এরূপ ফ্লাইট ডিস্প্লেসার ছোট ছোট প্লেনগুলোতে থাকে না । যেহেতু এই প্লেনগুলো মাটির বেশ কাছাকাছি উড়ে তাই এক্ষেত্রে পাইলট তার নিজের মতো করে ওয়েভ পয়েন্ট তৈরি করতে পারে । আর এক্ষেত্রে তারা কোথায় নদী আছে বা কোথায় পাহাড় আছে তা নিজেরাই নির্ধারণ করে চলাচল করতে পারে । অর্থাৎ ল্যান্ড মার্ক ফলো করে । আর এভাবেই প্রতিনিয়ত আকাশের অদৃশ্য HIGHWAY তে কোনো রকম সংঘর্ষ ছাড়াই প্লেনগুলো চলাচল করে থাকে ।
এখন জানা যাক কে আবিষ্কার করেছেন আকাশের হাইওয়ে । পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া আসার জন্য চলাচল করে শত শত বিমান । সাধারণত আমেরিকা থেকে উইরোপে যায় প্রতিদিন দেড় হাজার বিমান । অ্যাটল্যান্টিক মহা সাগরের উপরে সবসময় বিমান গুলোকে এই পথেই চলাচল করতে দেখা যায় । এবং এটি উড়োজাহাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট রাস্তা । যেখানে প্রতিটি বিমান একটি অপরটি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করে থাকে । এবং একটি থেকে অন্যটি প্রায় ১০০০ হাজার ফুট উঁচুতে থাকে । জেনে অবাক হবেন যে উড়োজাহাজের এই অদৃশ্য পথ ১০০ বছর আগেই আবিষ্কার করে হয় । এই আবিষ্কারক ছিলেন একজন জাপানি বিজ্ঞানী ওয়াছিবড় ঐশী ।
তিনি একজন আবহাওয়াবিদও ছিলেন । ১৯২০ এর দশকে তিনি বেলুন ব্যবহার করে খুব সতর্কতা সঙ্গে কিছু পরিক্ষা চালালেন । এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭ মাইল উপরে ঘন্টায় প্রায় দেড়শ মাইল তীব্র বায়ু প্রবাহ দেখতে পেলেন । যে বায়ু প্রবাহ বেলুনকে পূর্ব দিকে ঠেলতে থাকে । কিন্তু তার এই আবিষ্কার দুনিয়ার কাছে অজানাই থেকে যায় । তবে ২৫ বছর পরে, ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় তার এই আবিষ্কার ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে । অনুসন্ধান করে জানা যায় , ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ তরুণ বনভোজনের জন্য ওরেগ্ণ রাজে গিয়েছিল । সেখানে তারা একটি বড় বেলুন দেখতে পায় । এবং তারা সেটা জানার জন্য কৌতুহলী হয়ে উঠে । কিন্তু হঠাট করে বেলুনের ভিতরে থাকা বো’মা বি’স্ফো’রিত হয়ে যায় এবং ৬ তরুণ সাথে সাথেই মারা যায় । সেই সময় কালে যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছিলো ।
তদন্তরে বেড়িয়ে এলো ১০ কিলোমিটার দূরের দেশ জাপান থেকে এই বেলুন বোমা গুলো ছাড়া হয় । ২য় বিশ্বযু’দ্ধে জাপান ৯ হাজার বেলুন বোমা নিক্ষেপ করে যার মধ্যে মাত্র ৩০০ টি জাপানে সেট করা গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে । জাপানের বিজ্ঞানীর আবিষ্কার করা পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারনে JET STREMS পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় । অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের উত্তরের আকাশ পথ রয়েছে JETS STREAM । এজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে উত্রোপের পথে যাওয়ার সময় পাইলটরা জেনে বুঝে তীব্র গতির জেট বায়ু প্রবাহের মাঝে বিমান নিয়ে যান । কারন ঘন্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের এই বায়ু চলাচলের কারনে প্লেনকে সাম্নের দিকে নিয়ে যায় । এটা অনেকটা স্রোতের অনুকূলে নৌকা চালানোর মতো । এর ফলে প্লেনের গতি বেড়ে যায় এবং জ্বালানীর সাশ্রয় হয় ।
অদৃশ্য এই হাইওয়ে কেবলই উইরোপে যাওয়ার জন্য ব্যবহিত হয় । কিন্তু কোনো বিমান যখন উইরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে তখন সেটা JETS STREAM এড়িয়ে যাবে । অর্থাৎ বিমানের সামনে চলার পথে প্রবল বায়ু প্রবাহ বাধা সৃষ্টি করে থাকে । রাডারের সাহাযে JETS STREAM খুঁজে বের করা হয় । এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উইরোপ যাওয়ার সময় ৬ টা পথ ঠিক করে দেওয়া হয় । মূলত বলা যায় , সেই প্রথম আসলে কেউ যথাযথ ভাবে JETS STREAM মেপে দেখেছিল । যা যুগের পর যুগ ধরে সে অনুযায়ী মেনে ব্যবহার করা হচ্ছে ।