স্বর্ণের চেয়েও দামি যে রঙ

স্বর্ণের চেয়েও দামি যে রঙ

সারা পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০৬ টি দেশ রয়েছে । এবং তাদের প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে আলাদা আলাদা জাতীয় পতাকা । সেই পতাকায় ব্যবহার করা হয়েছে আলাদা আলাদা রং  এবং ডিজাইন । যেমন বাংলাদেশের পতাকায় আছে লাল রঙ এবং সবুজ রঙ ।

সবুজ রঙ হল প্রকৃতি ও তারুন্যের প্রতীক অন্যদিকে বৃতের লাল রঙ উদীয়মান সূর্য এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের জীবন দেওয়া মানুষের রক্তের  প্রতীক । বিশের সব দেশের পতাকাতে একটি মিল রয়েছে এবং এটা হল বেগুনি বা purple । কিন্তু প্রশ্ন হল এমন কি কোনো দেশ আছে যে দেশের পতাকায় বেগুনি রঙ গুরুত্ব  সহকারে স্থান পেয়েছে ? উত্তর হলো – না ।  

কিন্তু কেউই কেন এ রঙটি পছন্দ করলো না ? কেন সব রঙ থাকলেও বেগুনি রঙকে কি জাতির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যথেষ্ঠ যোগ্য রঙ বলে বিবেচিত করা হয় না ? না কি এ রঙকে বাদ দেওয়ার পিছনে অন্য কোনো যুক্তিসংগত কারন আছে ? আজকের ব্যাখ্যার মাধ্যমে বেগুনি রঙ কোনো পতাকায় না দেওয়ার মূল কারন জানতে পাওয়া যাবে ।

পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের দেশিও নিদর্শন ও ডিজাইন দেখতে পাওয়া যায় । কোনো দেশের পতাকায় কমলা এবং হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, আবার কোনো দেশের পতাকায় কেউ তারা এবং সূর্য বা ড্রাগন রেখেছেন । কিন্তু জাতীয় পতাকায় কোনোটিতেই বেগুনি রঙ দেখা যায় না । বিষয়টা এমন না যে বেগুনি রঙ কেউ পছন্দ করে না কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় মানুষের জীবনে এই রঙ সহজলভ্য হয়ে উঠেনি ।

রঙের মধ্যে Purple বা বেগুনি রঙ খুবই বনিধিরম । সমুদ্রের শামুক ও জিনুক থেকে অল্প অল্প করে বেগুনি রঙ আহরণ করা হয় । রোমানরা এ রঙকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ।

এক ইতিহাসে জানা যায়,বেগুনি রঙের মধ্যে আভিজাত্যের বা রাজকীয় বিষয়টি শুরু থেকেই । বেগুনি রঙের চারপাশে একটি রাজ্যত্বের গন্ধ লুকিয়ে থাকে । এটিকে Royel purple বলে উল্লেখ করা হতো । ষোড়শ ও সপ্তোদশ শতকে এটি এত মূল্যবান ছিল যে তা শুধুমাত্র ধনী ও রাজপরিবারের লোকেরা রঙটি সাজাতে পারত । তাই একে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো । বেগুনি রঙ নিয়ে একটি মজার ঘটনাও আছে ।

রানী ভিক্টোরিয়া প্রথম জনগনের ব্যয় নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি  নিয়ম চালু করেছিলেন । শুধু তা নিয়ম নয় এটাকে একবার আইনে পরিণত করেছিলেন । মুলত অর্থে রাজপরিবার ব্যতীত অন্য কাউকেই বেগুনি রঙের কাপড় পড়তে নিষেধ করা হয়েছিল সেই আইনে । কিন্তু এই রঙ অতন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার আসল কারন কি?

এর প্রকৃত কারনই হলো এটি ছিল বিরল এবং এটি উৎপাদন করা হতো একমাত্র প্রাকৃতিক ভাবে । প্রক্রিয়াটি খুব সময় সাপেক্ষ এবং শ্রমনিবিড় ছিল । এর উপরে প্রায় হাজার হাজার শামুক প্রয়োজনে হতো মাত্র ১ গ্রাম রঞ্জক তৈরি করতে । এর ফল হিসেবে তা সোনার থেকে ও বেশি ব্যয় বহুল ছিল । বেগুনি দামি ছিল কিন্তু বর্তমানে এখন তা নয় । এর কৃতিত্ব ইংরেজ রসায়নবিদ William H.perkin এর ব্যাপক উৎপাদনের ফলে ১৮৫৬ সালে এটি সস্তা হয়ে ওঠে ।

সিনথেটিক Purple প্রথম পোশাকে ব্যবহার করা হয় বলে ধারনা করা হয় । ব্রিটিশ কেমিস্ট উইলিয়াম হেনরি পারকিন ডাইয়িং এর ফর্মুলা আবিষ্কার করেন । ফ্যাশন তার প্রতি সর্ব যুগে কৃতজ্ঞ থাকবে । তাই বলা হয়ে থাকে বিশ্বের কোনো দেশের পতাকাতেই Purple বা বেগুনি রঙ নেই ।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version